মায়ের জন্য কান্না নামক ছোট গল্পের জিল্লুরের কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। স্ত্রীর সুখের জন্য নিজের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা সেই জিল্লুর এখন আর আগের মতো নেই। সে নিজের শুধরে নিয়ে মহাপুরুষ পর্যায়ের দিকে চলে যাচ্ছে। এই তিনটা বছর অনেক ঝড় ঝাপটা যেমন সে পার করেছে। তেমন নিজেকে নিয়ে গেছে অন্যরকম এক উচ্চতায়। রিকশাওয়ালা মবিনের কথায় যখন তার আবেগ বিবেক দু চোখই খুলে যায় মায়ের পা ধরে মাফ চেয়ে মাকে নিয়ে যায় বাড়িতে। স্ত্রীর সাথে নিত্য দিনের ঝগড়া শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়ে শেষ হয়। মিথ্যে নারী নির্যাতন মামলায় চাকরী ও খোয়ায় সে। সব যখন প্রায় ঠিকঠাক। নতুন চাকরী ভালো বেতন। সাথে নিজের ছোট ব্যবসার ও উন্নতি। মাকে নিয়ে যখন সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছিল সৃষ্টিকর্তা তখন মাকে নিয়ে যান পরপারে।
জীবনের এই ধাক্কা তার ভালোভাবেই লেগেছিল তবে খুব দ্রুত সে ঠিক হয়ে উঠে। সে জেলায় জেলায় ঘুরে শুরু করে নির্যাতিত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য শেষ আশ্রয় হতে। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে গোড়ে তোলে বৃদ্ধাশ্রম। মহান কাজ সৃষ্টিকর্তা অনেক সহজ করে দেয়। তার ব্যবসার উন্নতি যেমন ঘটতে থাকে। বন্ধু বান্ধব চেনা অচেনার কাছ থেকে আসতে লাগে সাহায্য। স্যোসাল মিডিয়ার ভালো একটা ফ্যান বেজ তার ক্রিয়েট হয়েছে। যার মাধ্যমে তার ভাল কাজ গুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো নেট দুনিয়ায়। মবিন এখন আর রিকশা চালায় না। বৃদ্ধাশ্রম দেখা শোনার দায়িত্ব মবিন এবং তার স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন জিল্লুর। আশ্রমের সবার একটাই মাথাব্যথা তাদের মধ্যমণি জিল্লুর খন্দকার সোহানের বিয়ে দেওয়া। তবে জিল্লুর ও এক কথা নারীর প্রতি তার আর কোনো বিশ্বাস নেই। সে লাখ লাখ বৃদ্ধ বৃদ্ধার ছেলে হিসেবে সারাটা জীবন পার করতে চায়। সবে তো ৪০০ জনের দায়িত্ব নিয়েছে।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে ২৬৪ কি মি দুরের একটা উপজেলা সদরে এসেছে জিল্লুর সোহান। সাথে মবিন শাহ এবং এলাকার স্থানীয় মজু। মজু পেশায় একজন অটো চালক। বান্দাইখারা নামক এক জায়গাতে যাচ্ছে তারা।
গত শীতে মধ্যে নদীর পাড়ে গর্ত করে এক বৃদ্ধ নাকি মাস খানিক যাবত এখানেই থাকছে। তার সন্তানরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে এবং শীত থেকে বাঁচতে সে এই অবস্থা বেছে নিয়েছে। মানুষ তাকে দেখতে আসে রোজ। কেউ কেউ খাবার নিয়ে আসে। এসব দিয়ে লোকটার দিন পার হচ্ছে। এত সান্ত্বনা কিংবা ভালবাসা থাকার পরও কেউ তার আশ্রয় দিচ্ছে না। ভাঙ্গা রাস্তায় চলতে চলতে বান্ধাইখারা বাজারে এসে উপস্থিত হল ওরা। মহাঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে গেছে।
বাজারে নেমেই লোকটার খোঁজ নিতে শুরু করলো ওরা। জানা গেলো আরো দু আড়াই কি মি যেতে হবে। একজন লোক ওদের সঙ্গী হল। তবে যেয়ে জানা গেলো বৃদ্ধ বাতেন আলীকে কেউ নিয়ে গেছে। মবিন বলল
- ভাই সাহেব এতো কষ্ট কইরা আইলাম বুইড়া কাকারে নিয়া যাওয়া হইলো না।
- হুম। কিন্তু মবিন মন খারাপ করো না। অন্য একজন তো তাকে আশ্রয় দিয়েছে।
- খোঁজ করলে ওনার সম্পর্কেও জানা যাবে। মজু ভাই চলেন বাজারের দিকে।
- যাওছি ভাই। কিন্তু বুলিচ্ছিলাম রাস্তাঘাট ভালো না বেশি রাত হওয়ার আগে মান্দা চলে গেলে ভাল হতো।
- হুম। আচ্ছা বাজার যাই আগে।
আশে পাশে লম্বা সময় খোঁজ নেওয়ার পর ভদ্রমহিলার পরিচয় পাওয়া গেলো। মহিলার বাড়ি দেলুয়াবাড়ি। অটো ড্রাইভার বলল কি কপাল। বাড়ির কাছে রেখে কত দূরে খুঁজতে এলাম ভাই।
জিল্লুর মোবাইল বের করে অন্য রাস্তা খুঁজতে লাগলো। নদীর এ পাড় দিয়ে ২৪ কি মি আর ও পার দিয়ে ২৫। মজু বলল
- ভাই এক কি মি কম দেখাচ্ছে ঠিকি তবে ৪-৫ কিলো রাস্তা প্রচুর ভাঙ্গা।
- অহ।
- তবে ভাই শুনেছি অন্য আরেকটা রাস্তা আছে
- নিশ্চয় অনেক দূর ঘুরে
- না ভাই। শর্টকাট। তবে রাস্তা যে কেমন হবে।
- (মবিন) রাস্তা এর থাইকা আর কি খারাপ হইবো। দরকার পরলে কোলে কইরা অটো পার করুম।
- তাই? মজু তুমি কি বলো?
- দেখেন আগে কয় কিলো দেখায়? পলাশবাড়ী বাজার লিখে সার্চ দেন।
লোকজন এবং ম্যাপের সাহায্যে এই রাস্তার খোঁজ মিলল। লোকজন বলল ভাঙ্গা থাকলেও যাওয়া যাবে প্রবলেম হবেনা। চক পলাশবাড়ী ৬ কিলো। পলাশবাড়ী থেকে মান্দা ১২ কিলো। ঐ রাস্তা আবার ভালো রাস্তা।
অচেনা রাস্তা দিয়ে শুরু হল পথচলা। যেতে যেতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব। মাটির রাস্তা হলেও ভাঙ্গা এখনো চোখে পরেনি। মবিন বলেই ফেললো দুরু মজু না কি নাম ভাই। আসার সময় এই রাস্তা দিয়া আইলেই হইতো। মজু বলল সেটা কি আর খেয়ালছিলো ভাই। তাছাড়া ঐ পাজরভাঙ্গার রাস্তার অবস্থা যে এত খারাপ হয়ে গেছে জানতামই না।
বিলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। চারপাশ থেকে বাতাস এসে লাগছে। ম্যাপে দেখাচ্ছে আর মাত্র ৩ কি মি বাকি পলাশবাড়ী । রাস্তা ঘাট ফাঁকা হতে লাগলো। কোনো গাড়ি নেই। ভ্যান অটো রিকশা নেই। নেই মটর সাইকেল ও। একটা বট গাছ পাড় হতেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। সামনে ছোট্ট একটা কালভার্ট পার হতেই একজন বৃদ্ধ কে দেখতে পেলো ওরা। জিল্লুর বলল কাকা রাস্তা ভালো তো? লোকটা টর্চ লাইট মেরে মেরে তিনজনকেই দেখলে। কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করলো। অবাক হল সবাই। সামনের লোকটা ও কোন উত্তর দিলো না। আস্তে আস্তে ভয় মনে বাসা বাঁধতে লাগলো তবে কেউ কাউকে বুঝতে দেওয়ার পাত্র নয়। এতক্ষণ গুন গুন করে গান গাওয়া মজু ও চুপ চাপ। আর কিছু দূর যেয়ে ভাঙ্গা রাস্তা শুরু হলো। মজু মনে মনে ভাবছে কেনো যে এই রাস্তা দিয়ে আসতে গেলাম। এবার অবস্থা আরো ভয়াবহ। রাস্তার উপর দিয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে পানি যাচ্ছে। আর একটু সামনে যেয়ে প্রায় হাফ হাঁটু পানি রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। মজু বলল ভাই এবার কি করবো? কিসোক যে আসতে গেলাম। মবিন অটো থেকে নেমে হেঁটে রাস্তা পাড় হলো। অবস্থা বুঝে বলল দুপাশ থেকে দুজন ধরলে যাওয়া যাবে গাড়ি ভাঙ্গায় পরবে না। প্যান্ট ভাঁজ করে জিল্লুর এবং মবিন কষ্টে গাড়ি পাড় করলো। রাস্তা ২ কি মি হবে আর। তবে মনে ভয় কাজ করছে তিনটা। রাস্তা যদি সামনে আরো খারাপ হয়? কিংবা যদি ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হয় কিংবা অশুভ কিছু যদি ধরে? অশরীরীকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের তর্কে মনের মাঝে বিশ্বাসটাই তখন বেশি কাজ করে। সামনে দুজন লোককে দেখা গেলো। তারা অভয় দিলো যাওয়া যাবে। সামনে মাত্র একটাই ভাঙ্গা আছে। তবে গাড়ি পাড় করা সম্ভব।
ডাক্তার শ্রাবণী বৃদ্ধর আদর যত্নের কোনো কমতি রাখে নি। খাওয়ে দাওয়ে বৃদ্ধ কে ঘুমানোর জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধ দিব্বি ঘুমাচ্ছে। এরকম নিশ্চিন্ত আরামের রাত শেষ কবে সে পেয়েছে মনে নেই। শ্রাবণী বেলকুনিতে বসে চা খাচ্ছে। গোপাল চাচা ব্যস্ত। কতদিন পর তার মালিক এ বাসায় থাকছে। দুদিন থেকে চলে যাবে।
- শ্রাবণী
- কে?
- আমি
- কমলা দিদি। এতদিন পর তুমি হঠাৎ?
- তোর দেলুয়াবড়ির বাড়িতে আমি আসতে পারি না।
- কেনো দিদি?
- এত কেনোর উত্তর দিয়ে তোর লাভ নেই। জয়ন্তর দুর্ঘটনার কথা তোর মনে আছে?
- হুম।
- শোন তবে ঘটনা।
- কিসের ঘটনা।
- আরে শোন
- বলো
- জয়ন্ত যেই ট্রাকের নিচে পড়েছিল সেই ড্রাইভার তো আর জানতো না ও একটা পিশাচকে মেরেছে। ও পাপ বোধের মধ্যে পরে গেলো সেদিন। টেনশন পাপ বোধ সব মিলিয়ে সামনে যেয়ে আবার অ্যাকসিডেন্ট করলো। ট্রাক উল্টে খাদে জুনায়েদ ড্রাইভার পরপারে। খবর পেয়ে তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী ভেঙ্গে পড়লো। সেদিনই ব্যথা উঠলো। হাসপাতালে জন্ম হল মবিনের। বাবার পর মা ও হারালো জন্মের দিনই। অপয়া উপাধি নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকা ছেলের জায়গা হল রাস্তায়।
- কি বলছো এসব। আগে কেনো বলো নি?
- আগে বলার সময় হয়নি। তুমি ছোট ছিলে তোমার বাবা মা তো জয়ন্তর পশু রূপ টা জানতো না।
- আজ বলার কি বিশেষ কোন কারন আছে?
- হুম মবিন আশে পাশেই আছে।
কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া জিল্লুর কে চেনো না?
- হুম সে তো ঢাকায় থাকে। আর তার সঙ্গী মবিন ই সেই মবিন?
- হুম। তুমি যেই বৃদ্ধকে নিয়ে এসেছো তার খোঁজে জিল্লুর আর মবিন এসেছে।
- দিদি তাহলে তোমার ক্ষমতা দিয়ে তাদের এখানে আনার চেষ্টা করো প্লিজ।
- আর ওরা তোমাকেই খুঁজছে। । তবে এ বাড়িতে তুমি আছো সেটা ওরা জানেনা। আসলে অবাক হবে নিশ্চয়।
শ্রাবণী সম্পর্কে জানার জন্য ভয়াল রাত সংখ্যার শ্রাবণীর রাত্রি যাপন গল্প পরে দেখতে পারেন। শ্রাবণীর বয়স বর্তমানে ৪২ বছর। তবে দেখে কেউ বয়স আন্দাজ করতে পারবেনা। এখনো বিয়ে করে নি। করার ইচ্ছা ও জাগেনি ওর। পুরুষ জাতির উপর একটা অবিশ্বাস বিরাজ করে সর্বদা ওর কাছে।
যেই পরিমাণ ভাঙ্গা জিল্লুর ভাই মনে হয়না যাওয়া যাবে মবিন বলল।
জিল্লুর বলল এটা পার হতে পারলেই মেইন রোড পেতাম। কিন্তু এখান থেকে আবার ফিরে যেতে হবে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।
মজু বলল ঠিকই বলিছেন ভাই। কি আর করার গাড়ি ঘোরাই।
নামেন গাড়ি থেকে। যেমন সরু রাস্তা গাড়ি ঘোরাতেও মেলা কষ্ট হবে।
গাড়ি থেকে নামতে যাবে জিল্লুর এমন সময় কেউ ডাকলো। এ ভাই আপনারা কারা। কই যাওছেন?
সবাই চমকে উঠলো মধ্য বয়সী একজন লোক এলো এগিয়ে। ওরা সব খুলে বললো। লোকটা বললো শুধু শুধু কষ্ট করে এলেন। আবার কেনো দশ গুণ কষ্ট করতে চাচ্ছেন। সবাই মিলে ধরলে ঠিকই গাড়ি পার হবে। তাছাড়া সামনে আর ভাঙ্গা নেই কোনো।
কিছুক্ষণ আগে যেই রাস্তা দিয়ে যাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিলো সেই রাস্তা পারাপার সম্ভব মনে হচ্ছে। মজু গাড়িতে বসল। জিল্লুর এবং মবিন ডান পাশ থেকে গাড়ি ধরলো। ঐ লোক বাপ পাশ থেকে কি এমন করলো গাড়ি খুব সহজে ভাঙ্গা পার হলো।
লোকটা বললো ভাই আপনি ই তো সেই ভাইরাল জিল্লুর তাই না। জিল্লুর বলল কি যে বলেন ভাই। জি আপনাদের দোয়াতে। লোকটা বলল জিল্লুর ভাই আপনার বয়স তো ভালোই হলো বিয়েটা করে ফেলেন। জিল্লুর বলল নাহ ভাই বিয়ে আর করা হবে না এই জীবনে। লোকটা বলল হবে হবে। বিয়ে করে ফেলুন আপনার মতো একজনকে, যে অসহায় মানুষকে ভালবাসে এমন কাউকে। জিল্লুর মুচকি হাসলো।
- সোহান সাহেব। আপনি যে বৃদ্ধর খোঁজে এসেছিলেন সে আপনার আশে পাশেই আছে।
- মানে?
- জ্বি। শ্রাবণী ম্যাডামের সামনে আরেকটা বাড়ি আছে। তিনি দুদিন এখানেই থাকবে। দেখা করে যান।
- কিন্তু রাতে?
- রাত আর কত হল। এ কাছ থেকে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যাবেন।
- আর সোহান ভাই শ্রাবণী আপা কিন্তু অবিবাহিত।
জিল্লুর চুপ করে রইলো। লোকটা মজুকে বললো অনেকক্ষণ চালাচ্ছেন। হাত লেগে যাওয়ার কথা পাশে বসেন আমি বাকি রাস্তা নিয়ে যাচ্ছি।
সুবিশাল প্রাচীর। তার মাঝে পুরোনো মডেলের অসাধারণ একটি বাড়ি। অটো থেকে নামতেই শ্রাবণী এগিয়ে এলো
- আরে জিল্লুর সাহেব যে? আপনি এখানে?
- বৃদ্ধকে একবার দেখতে এসেছি ম্যাডাম।
- কিন্তু ঠিকানা।
- সব খুলে বলব। যদি একটু দেখা করার ব্যবস্থা করতেন।
- উনি তো ঘুমিয়ে গেছে। এক কাজ করুন আপনারা ও ফ্রেস হয়ে নিন।
- না ম্যাডাম রাত হয়ে যাচ্ছে মান্দা পৌঁছাতে হবে।
- আরে না কি বলেন আপনার মতো বিশাল একজন মানুষকে এতো সহজে ছেড়ে দেবো?
- কিন্তু ম্যাডাম। অটো? (মজু বলল)
- ভাই আপনার নাম?
- মজু
- আজ থেকে গেলো খুব একটা সমস্যা হবে।
- না। কিন্তু গাড়িত চার্জ দিলে কাল সারাদিন চালাবার পারতাম।
- আর নাহ করবেন না। কালকের ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি। আপনি বাসায় ফোন করে বলে দেন।
- জ্বি।
রাতের খাবারে এতো এতো আয়োজন দেখে অবাক হতে হল সবাইকে। খাবার স্বাদ ও ছিলো মনে রাখার মতো। হোটেলের খাবার খেতে খেতে বাড়ির খাবারের স্বাদ প্রায় ভুলতে বসেছে জিল্লুর।
- সোহান সাহেব ধন্যবাদ
- কি যে বলছেন ম্যাডাম ধন্যবাদ তো আপনার প্রাপ্য। হুট করে আসা মুসাফিরকে এতো ভালভাবে আপ্যায়ন করলেন আমাদের অতি সু ভাগ্য।
- চাচা ঘুমিয়ে আছে কাল দেখা করলে হয় না?
- জ্বি অবশ্যই।
- আপনারা চাইলেও এখন যেয়ে রেস্ট করতে পারেন। আর যদি চান ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ।
- আপনার কষ্ট করতে হবে না। আপনি বরঞ্চ রেস্ট নেন। কিছু লাগলে গোপাল বাবু তো আছেন ই।
- নাহ তা হয়না। আর সোহান সাহেব আপনার কাজে আমরা মুগ্ধ। আপনার কাছে কিছু পরামর্শ যদি পেতাম।
- কিসের পরামর্শ ম্যাম
- নাম ধরে ডাকতে পারেন ম্যাম ম্যাম করতে হবেনা। যদিও বয়সে আপনার থেকে বড়ই হবো।
- কি যে বলেন আপনি আমার থেকে কম হলেও ৫-৭ বছরের ছোট হবেন।
- তাই? আপনার বয়স কত শুনি? যদিও বয়স জিজ্ঞাস করা অভদ্রতার মধ্যে পরে।
- ৩৬
- আমার বয়স ৪২
- কি বলছেন।
- জি ঠিকই বলছি।
- দেখে বোঝা যায় না .
- আসল কথায় আসি। আমি চাচ্ছি আমার দেলুয়াবড়ির ৫ তালা বাড়ি পুরোটা বৃদ্ধাশ্রম এর জন্য দিতে চাচ্ছি।
- বাহ ভালো তো।
- ধন্যবাদ। তবে আমি এ বিষয়ে কিছুই বুঝিনা যদি একটু বলতেন কিভাবে কি করতে হবে।
রাত ১১ টার কাছাকাছি। মজু এবং গোপাল কাকা প্রাচীরের বাইরে বসে বসে গাজা খাচ্ছে। মবিন দেখছে দুজনের পাগলামি। কি সব যে বলছে মবিন হাঁসি আটকে রাখতে পারছেনা। সিগারেট গাজা এগুলো খেয়ে মানুষ কি মজা পায় ভাবছে ও।
শ্রাবণী কোন পুরুষের সাথে এতো সময় ধরে কথা বলেনি। কারন সুব্রত মামার ঘটনার পর পুরুষ জাতির উপর থেকে ওর বিশ্বাস একদম উঠে গেছে। লোকটাকে ভালোই মনে হচ্ছে ওর। তারপরেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেনা। কমলা দিদির আত্মা বার বার ইশারায় বলছে একেই বিয়ে করে ফেলো ভালো হবে। ষোড়শী মেয়ের মত লজ্জা পাচ্ছে শ্রাবণী। জিল্লুর মাঝে মাঝে শ্রাবণীর অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়ার কারন বুঝতে পারছেনা। অসম্ভব ভালো একটা মহিলা শ্রাবণী। ওর কথা বার্তা দেখে বুঝতে বাকি নেই জিল্লুরের। দেখতেও পরির মতো। এতো বয়স হয়ে গেছে বয়সের ছাপ ও কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। সত্যি কি এই মেয়েটার বয়স চল্লিশ পাড় হয়ে গেছে কিন্তু কিভাবে?
তুমি ঠিকি ভেবেছো সোহান। সোহান চমকে উঠলো। পিছন থেকে এক তরুণী সোহানের দিকে এগিয়ে এলো। শ্রাবণী কিছু বলার আগে কমলা দিদি বলল
- চেনা চেনা লাগছে।
- ঈশিতা তুমি এখানে কিভাবে?
- আমি ঈশিতা না আমি কমলা
- মানে?
- আমার নাম কমলা। আমি শ্রাবণীকে ছোট বেলা থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি।
- ফান করছেন আমার সাথে। আপনার বয়স কত হবে আপনি কিভাবে শ্রাবণীকে কোলে পিঠে করে মানুষ করবেন।
- বেচে থাকলে তো বয়স বাড়বে।
- হা হা হা। আমাকে ভুতের ভয় দেখাবেন না। তবে আয়োজন টা সুন্দর ছিলো।
শ্রাবণী চেঁচিয়ে উঠলো। কমলা যাও তো এখান থেকে মজা করো না। একজনের সামনে হুট করে এভাবে আসা ঠিক না।
কমলা বলল আমি যাচ্ছি তবে কথা গুলো বলো শ্রাবণী। নয়তো আমাকে আসতেই হবে।
জিল্লুর কিছুতেই বুঝতে পারল না সত্যিই সে অশরীরীর মুখোমুখি হয়েছিলো।
শ্রাবণী বলল সরি জিল্লুর সাহেব। বলতে না বলতে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। কিছু একটা চোখে ঢুকেছে। জিল্লুর এগিয়ে গেলো। বলল আমি দেখছি। শ্রাবণী চোখ দুটো দু আঙ্গুল দিয়ে ফাক করে ময়লার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছিল। শ্রাবণীর চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। দীর্ঘ পাঁচ মিনিটের চেষ্টায় ফ্ল্যাশ লাইট আর জ্যোৎস্নার আলোতে ময়লা বের করলো। শ্রাবণী লজ্জায় কিছু বলতে পারছিল না। জিল্লুর বলল সরি এভাবে।
শ্রাবণীর বুঝতে বাকি রইলো না কমলা দিদি ধাক্কা দিয়েছে। তবে কেনো দিদি এই লোকটার সাথে ওকে এরকম লজ্জাকর অবস্থায় ফেলছে ও বুঝতে পারছেনা। জিল্লুর উঠে শ্রাবণীকে উঠালো। কিছু বলতে যেয়ে বলতে পারল না শ্রাবণী চলে গেলো। জিল্লুর মনে মনে ভাবতে লাগলো মেয়েটা ওকে নিশ্চয় খারাপ ভাবছে।
পিছন থেকে কেউ কাশি দিলো। জিল্লুর পিছন ফিরে দেখে ঐ লোকটা যে ওদের অটো এখানে নিয়ে এসে ছিলো। অবাক হলো। এই লোক তো চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এতো রাতে কখন এলো। কেনো এলো।
-সোহান সাহেব আপনাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার একটা উদ্দেশ্য আছে?
- মানে?
- জ্বি। আর সেটা আপনার এবং মবিনের জানা দরকার।
- বুঝলাম না মবিন কোথায়?
- মজু গোপাল ওদের সাথে তাস খেলছে। আপনাকে অনেকক্ষণ পর একা পেলাম।
- বলুন।
- আমি জানি মবিন ওর জন্ম পরিচয় জানেনা।
- কিন্তু কিভাবে?
- কথা বলবেন না মন দিয়ে শুনুন।
জয়ন্ত নামে ----------------
------। ঐ ট্রাক ড্রাইভার ওর বাবা আর ও মামা ও ওর জন্মের সময় মারা গেছে।
- আপনার কথা আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আর এতো কথা কিভাবে জানেন আপনি? আপনার পরিচয় দিন।
- পরিচয় দেবো। অবশ্যই দেবো। এই দেখুন ড্রাইভারের বিয়ের ছবি। ওর বাবা মার ছবি দেখার পর ওর চেহারা কতটা মিল বাবার সাথে দেখুন। আর আপনার ইমেলে হাসপাতালের ঠিকানা এমন কি ঘটনার দিন কেস ফাইল। পত্রিকা এগুলোর ডেট দিচ্ছি সব পেয়ে যাবেন।
- আমি আপনার কথা বিশ্বাস করলাম। তবে আপনি কিভাবে এতো কিছু জানেন ভাই?
- বলবো তার আগে শ্রাবণী সম্পর্কে শুনুন
..................... ।....................। মেয়েটা পুরুষদের বিশ্বাস করেনা। তাই বিয়ে করেনি। এখন বয়স হয়ে গেছে। আপনার থেকে বয়সে বড় হবে। তবে যদি আপনার আপত্তি না থাকে প্লিজ ওকে বিয়ে করুন।
- আপনি ওর কি হন?
- আমি ওর দিদি।
- মানে?
- সেই কালভার্টের সামনের বৃদ্ধ টর্চ আলা কথা না বলা লোক। সেই পথ দেখিয়ে দেওয়া লোক। এবং এখন যে রূপে দেখছেন সেই লোক সবই আমি। আর আমার আসল রূপ ঐ কমলা নামের মেয়েটা।
লোকটা কমলার কণ্ঠে আরো কিছু কথা বলে উধাও হয়ে গেলো। জ্ঞান হারালো জিল্লুর।
সকাল নয়টা। মবিন জিল্লুরের পাশে বসে আছে। জিল্লুর বলল মবিন কি হয়েছিলো আমার?
মবিন বলল অনেক জ্বর ছিলো সারারাত ভাই শ্রাবণী ম্যাডাম সারা রাত সেবা করছে। জল পট্টি দিছে। এখন নাস্তা বানাতে গেছে।
মবিন তোমার বাবা মা দুজনই খুব ভাল মানুষ ছিলো।
তারা বেচে নেই। তবে তাদের পরিচয় আমি পেয়েছি। জলদি তাদের কবর জিয়ারত করতে তোমাকে নিয়ে যাবো। মবিন কি কন ভাই কেম্নে কি? সবই খুলে বলবো। মবিনের চোখে পানি চলে আসলো। মজু ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
- সোহান সাহেব আসতে পারি?
- জ্বি জ্বি আসুন।
- না না উঠবেন না শুয়ে থাকুন।
- এখন ভাল আছি শ্রাবণী।
- তারপরও রেস্ট নিন। দেখি জ্বর মেপে।
- এত যত্ন নেবেন না প্লিজ। তাহলে মায়ায় বাধা পড়বো।
- সরি সোহান। কমলা দিদিকে বকে দিয়েছি। সে আর কখনো আপনাকে ডিস্টার্ব করবেনা।
- করবে
- না করবে না।
- করবে না যদি আপনাকে বিয়ে করি।
- কি?
- হুম। শ্রাবণী। আপনি আমার বৌ হবেন?
- (চুপ)
- কি হল লজ্জা পাচ্ছেন।
- (চুপ)
- বলবেন না?
- দিদির ভয়ে বিয়ে করবেন আমাকে?
- দিদি কে প্রথম বার দেখে ভয় পেয়েছি আর কখনো পাবো না। সত্যি বলতে অশরীরী আমি বিশ্বাস করতাম না।
- এখন না করে থাকতে পারবেন না। তাই না?
- হুম। তবে দিদিকে ধন্যবাদ আপনার মতো একজনের সাথে মিট করিয়ে দেবার জন্য।
- সোহান আমি আপনার থেকে বয়সে বড়।
- আমার প্রবলেম নেই তাতে।
- আমি হিন্দু।
- আমি জানি।
- আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি।
- কুড়ি বয়সী যুবতী ও আপনার থেকে বুড়ি দেখা যায়। আমাকে পছন্দ হয়নি তাইতো?
- নাহ এমন না।
- তো বয়সে ছোট তাই
- না
- তাহলে ধর্মের জন্য?
- মানব ধর্ম সবার আগে
- তাহলে দেখতে অনেক পচা তাইনা?
- ধুর তেমন কিছুই না। আমি কিছু জানিনা।
- আমি আজই বিয়ে করতে চাই আপনাকে।
- আজই??
- হুম অনেক দেরী হয়ে গেছে আর একা থাকবো না?
- দেহো..
- না দেহো কিছু নয়
নয় রূপ যৌবন
ভালবাসা হল তা
যাকে লাগে আপন
যাকে ভরসা করা যায়
বিশ্বাস যার মাঝে আছে
আর আমারই মতো যে
চাই আপন করে চাই তাকে।
- আপনি কবিও?
- আগে ছিলাম না। আজ থেকে। শুধু তোমাকে নিয়ে লেখতে চাই।
- তুমি কি তুমি? সারা জীবন আপনি বলে ডাকবেন।
- তুই তুমি আপনি সবই বলবো।
- বাচ্চাদের মতো করবেন না।
- প্রেমের কোন বয়স হয়না।
- কিশোর বয়সের প্রেমে যা করা যায়। এই বয়সের ও। বুঝলে?
- হুম।
- আই লাভ ইউ।
- আমিও
- কি
- আপনাকে
- আপনাকে না তোমাকে
- ধুর পারবোনা।
- পারতে হবে
- আই লাভ ইউ থু সোহান । আমি তোমার প্রেমে পরেছি মিস্টার জিল্লুর।
প্রেমের গল্প লেখা বেশ কঠিন কেমন হয়েছে জানিনা। আর এক গল্পের সাথে অন্য গল্প জুড়ে দেওয়ার জন্য যারা বিরক্ত জানাবেন। খারাপ লাগলে আরো জোড়া লাগাবো না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Pervez Chowdhory
ভাই আপনার লেখা প্রতিটা গল্প আমার ভাল লাগে আর আপনার কোনো এক পোষ্টেই আমি গল্পকবিতায় এসেছিলাম। রয়ে গেছি সাহিত্যপ্রেমী হয়। হয়নি বলা আজ বললাম ধন্যবাদ ভাই
রোকেয়া বেগম
পড়া থামিয়ে আবার শ্রাবণীর গল্পে ঢুকলাম আহ কি ছিলো চমৎকার আপনার সেরা সৃষ্টি। তারপর আবার ফিরে এলাম এগল্পে। তবে তখনও বিরক্ত লাগছিলো প্রেমটা বৃদ্ধাশ্রম কেন্দ্রীক না হয়ে ভালবাসার গল্প হচ্ছে তাই। তবে মবিনের জন্মপরিচয়ের লোভ সামলাতে না পেরে পড়তে লাগলাম। না গোঁজামিল চমৎকার ভাবে মিলিয়ে দিলেন। আর ততক্ষণে আমিও শ্রাবণী জিল্লুরের মিলন দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। লেখক সত্যি বলছি অসাধারণের উপরে যদি কিছু থাকে আমি সেই মার্কসটাই আপনাকে দিতাম। তবে অন্য গল্প গুলো পড়ে তারপর জানাচ্ছি অনুভুতি
রোকেয়া বেগম
তারপর বর্তমান লেখায় ফিরলাম। ভেবেছিলাম জিল্লুর এবার দেখিয়ে দেবে অযত্নে বেড়ে ওঠা মা বাবাদের ভালবাসা কাকে বলে। প্রেম থাকবে বৃদ্ধাশ্রম কেন্দ্রীক। তারপর মনে হলো এবার বুঝি চলে এলাম গা ছমছম কোনো গল্পের ভিতরে। তারপর কি হল???
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স কি গুরুত্বপূর্ণ??
১৯ এপ্রিল - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।